সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা পার্ট-১

      ৪র্থ অধ্যায়
          
সংসদীয় বা মন্ত্রীপরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যঃ  
 
          নি¤েœ সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা মন্ত্রীপরিষদ সরকার ব্যবস্থার   বিস্তারিত বিবরন দেওয়া হলো ।

১. নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রপ্রধানঃ
      সংসদীয় শাসন ব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ঠ্য হলো রাষ্ট্র প্রধান । নামমাত্র শাসক এবং নিয়ম তান্ত্রিক প্রধান । তিনি প্রকৃত ক্ষমতা চর্চা করেন না । তিনি অলংকারিক বা নাম সর্বস্ব প্রধান । তিনি নির্ধারিত সময়ের জন্য নির্বাচিত হন । 

২. মন্ত্রীসভা প্রকৃত শাসকঃ
          এই ব্যবস্থায় সরকারের প্রকৃত ক্ষমতা মন্ত্রী সভার হাতে ন্যাস্ত থাকে । মন্ত্রীসভায় প্রকৃত শাসক এবং সমস্ত ক্ষমতার পরিচালক । মন্ত্রীসভা ছাড়া সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা পরিচালিত করা সম্ভব নয় ।


৩. আইন ও শাসন বিভাগের মধ্যকার সম্পকর্ঃ
              সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় আইন সভার সংখ্যা গরিষ্ঠ দলের প্রভাবশালী ব্যাক্তিদের নিয়ে মন্ত্রীসভা গঠিত হয় । স্বাভাবিক ভাবেই মন্ত্রীগন আইন সভার উপরে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হন । 
এই  ব্যবস্থায় আইন ও শাসন বিভাগের মধ্যকার  সুসম্পর্ক বজায় থাকে । 

৪. মন্ত্রীসভা গঠনঃ
        এই শাসন ব্যবস্থায় মন্ত্রীপরিষদ গঠিত হয় । আইনসভায় নির্বাচিত জ্ঞানীগুণী, অভিজ্ঞ, প্রভাবশালী সদস্যদের নিয়েই । সাধারন আইন সভায় সংখ্যা গরিষ্ঠ রাজনৈতিক দলের সদস্যদের নিয়ে মন্ত্রীসভা গঠিত হয় এবং এই মন্ত্রীসভায়ই সরকার পরিচালনা করে ।


৫. প্রধানমন্ত্রী কেবিনেটের প্রাণ প্রদীপঃ
               প্রধানমন্ত্রী নেত্বৃত্ব ও গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা এই সরকারের অন্যতম বৈশিষ্ঠ্য । আইন সভার সংখ্যা গরিষ্ঠ দলের নেতাই হন প্রধানমন্ত্রী । তার নেতৃত্বাধীনেই মন্ত্রীসভা গঠিত হয় । 
তার পরামর্শেই মন্ত্রীসভার সদস্যগণ নিয়োগদান ও বরখাস্ত করা হয় । তিনি সংখ্যা গরিষ্ঠ দলের নেতা, সংসদের নেতা, ও কেবিনেটের নেতা বা প্রধান ।

৬. দলীয় সরকারঃ 
       দল ব্যবস্থা হলো সংসদীয় সরকারের প্রাণ কেন্দ্র । এই সরকার অবশ্যই দলীয় সরকার । নির্বাচনে যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে সক্ষম হয় সেই দল সরকার গঠন করে । 
অন্যান্য দল গুলো বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করে ।    


৭. বিরোধী দলের ভূমিকা ও মর্যাদাঃ
          শক্তিশালী ও সুসংঘটিত এক বা একাধিক বিরোধী দলের অস্তিত্ব সংসদীয় ব্যবস্থার জন্য অপরিহার্য ।
  


৮. কেবিনেট এবং তার সংহতি ও গোপনীয়তাঃ
        মন্ত্রীপরিষদ সরকার ব্যবস্থায় মন্ত্রীসভার মধ্যে আরও ক্ষুদ্রাকৃতির একটি সংস্থা গঠন করা হয় একে কেবিনেট বলে । কেবিনেট হলো এই সরকার ব্যবস্থার নীতিনির্ধারনকারী সংস্থা এই কেবিনেট
 সদস্যগণ কেবিনেট সভায় খোলাখুলি ভাবে আেেলাচনা করেন  করেন এবং সরকারের সমালোচনা মূলক কর্মকান্ডের  মতও ব্যক্ত করেন ।

৯. সুপরিবর্তনীয় সংবিধানঃ 
            ঢ়ৎড়ভ. ইধমবযড়ঃ ংধরফ, মন্ত্রীপরিষদ শাসিত সংবিধানের নমনীয়তা সম্পর্কে বলেন, “এ ব্যবস্থায় জনগন সময়োপযোগী শাসক নির্বাচন করে । জাতীর সংকট মুহূর্তে¡ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে । ” অর্থ্যৎ এ ব্যবস্থায় সংবিধান কিংবা শাসন তান্ত্রিক রীতিনীতি সহজে পরিবর্তন করা সম্ভব । 

১০. গোপনীয়তাঃ
          সংসদীয় সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ঠ্য হলো গোপনীয়তা । এ ব্যবস্থায় সরকার কেবিনেট সভায় খোলাখুলি আলোচনা হয় ।  খোলা খুলি আলোচনার পর সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয় । এই ধরনের আলোচনায় পরস্পর বিরোধী মতামত ব্যক্ত হলেও গৃহিত সিদ্ধান্ত ও মতামত বাহিরে প্রকাশ করা হয় না । 


                ৫ম অধ্যায়

সংসদীয় সরকার বা মন্ত্রীপরিষদ শাসিত সরকারের গুণাবলিঃ
       

১. আইন ও শাসন বিভাগের সুসম্পর্ক ঃ
           সংসদীয় বা মন্ত্রী পরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থায় আইন ও শাসন বিভাগের সুসম্পর্ক বিরাজ করে । উভয় বিভাগের কর্ম ক্ষেত্রে পূর্ণ সহযোগিতা ও ঐক্য নিশ্চিত করা যায় । 
উভয় বিভাগের মধ্যে সহযোগীতার ফলে উন্নত মানের আইন তৈরী ও তা সুষ্ঠ ভাবে প্রয়োগের সুবিধা হয় ।

২. দায়িত্বশীলতাঃ
        দায়িত্বশীলতা সংসদীয় বা মন্ত্রীপরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থার একটি উত্তম গুণ । এই ধরনের ব্যবস্থায় সরকার তার যাবতীয় কর্মকান্ডের জন্য জনগনের নিকট দায়ী থাকে ।
 

 

৩. গণতান্ত্রিকতাঃ
         মন্ত্রীপরিষদ শাসিত সরকার হলো গনতান্ত্রিক সরকার  । এ ধরনের শাসন ব্যবস্থায় সরকারের মন্ত্রীসভা জনগন কর্তৃক নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে যেমন গঠিত হয়, তেমনি  সরকারও গনতান্ত্রিক ভিত্তিতে পরিচালিত হয় । সরকার সার্বিকভাবে সংসদের নিকট এবং জনগনের নিকট দায়ী থাকে ।

৪. সুশাসনঃ
         সুশাসন সংসদীয় বা মন্ত্রীপরিষদ শাসিত সরকারের একটি বিশেষ গুণ । এই ধরনের সরকার ব্যবস্থায় জনগনের সম্মতি নিয়ে তাদের জানমাল ও স্বাধীনতা প্রভৃতি রক্ষা ও সুশাসন নিশ্চিত করা হয় । 
তাছাড়া সরকারী বিরোধী দলের মধ্যে সরকারী কর্মকান্ড নিয়ে বাদানুবাদ হয় ।

৫. জনকল্যাণঃ
          বিশিষ্ট গণের মতে,  সংসদীয় বা মন্ত্রীপরিষদ শাসিত সরকার একটি জনকল্যাণ মূলক সরকারও বটে । কারণ এ ধরণের সরকার ব্যবস্থায় জনমতও জনকল্যাণকে সর্বাধিক প্রাধান্য দেওয়া হয় । 
 জনমতকে সামনে রেখে সরকার কর্মসূচি প্রণয়ন করে ।


৬. নেতৃত্বের বিকাশঃ
             সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় নেতৃত্বের বিকাশ সাধিত হয় ।  কারণ এটি বিকাশের একটি উপযোগী শাসন ব্যবস্থা । এ ব্যবস্থায় সৎ,যোগ্য,শিক্ষিত, অভিজ্ঞ ব্যাক্তিদেরকেই জনগন তাদের প্রতিনিধি রূপে নির্বাচন করে ও তারাই মন্ত্রীসভায় স্থান লাভ করে। 

৭. রাজনৈতিক শিক্ষার প্রসারঃ
            সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় রাজনৈতিকদের মধ্যে রাজনৈতিক শিক্ষার প্রসার ঘটে । কারণ এ সরকার দলীয় সরকার । সরকারী দলও বিরোধীদল জনমত সংগ্রহের জন্য সবসময় তৎপর থাকে । ফলে দলীয় প্রচার প্রচারনা ও কর্মকান্ড সর্বদা অব্যাহত থাকে । 
৮. রাজনৈতিক মেরুকরণঃ
           সংসদীয় বা মন্ত্রীপরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থা দ্বিদলীয় ব্যবস্থার জন্য বিশেষ উপযোগী । এত ছোট ছোট দলগুলো বড় বড় দলের সাথে একীভূত হয়ে নির্বাচন করে । ফলে রাজনৈতিক মেরুকরণ হানাহানি দ্বন্দ্ব সংঘাত নিরসন হয় । 
৯. স্বৈরতন্ত্র প্রতিরোধঃ 
          সংসদীয় সরকার স্বৈরতন্ত্র প্রতিরোধ করে ।এখানে সরকার নিজে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আইনসবার উপর নির্ভরশীল । বিরোধী দল সরকারের দোষত্রুটি অনুসন্ধানে ব্যস্ত থাকে । সরকার ও বিরোধীদল এর সমালোচনার জবাব প্রদান করে থাকে । ফলে স্বৈরাতন্ত্রী সরকার ক্ষমতায় আসতে পারে না ।
 

আপনি ও পছন্দ করতে পারেন