অর্থনৈতিক উন্নয়নে রপ্তানি খাতের ভূমিকা পার্ট-২

বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের সমস্যাঃ


            বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রপ্তানি খাতের অবদান থাকলেও এতে বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে ।  উক্ত সমস্যা গুলো নি¤েœ আলোচনা করা হলো ঃ-

প্রাকৃতিক সম্পদের অভাবঃ
      আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমাণ খুবই কম । এজন্য আমরা খুব বেশি পন্য উৎপাদন করতে পারি না । এছাড়া কারিগরী শিক্ষার অভাবে এই অল্প প্রকুতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না । এর ফলে বাংলাদেশ তেমন কোন পন্য রপ্তানি করতে পারে না । 

শ্রমিকের অদক্ষতাঃ
        শ্রমিকের অদক্ষতা রপ্তানি খাতের একটি বড় সমস্যা । নারী ও পুরুষদের কারিগড়ি শিক্ষার অভাবে তারা দক্ষতা অর্জন করতে পারে না । বাংলাদেশে ট্রেনিংএর জন্য উপযুক্ত যন্ত্রপাতি নেই । যার ফলে দক্ষ শ্রমিক গড়ে তোলা সহজে সম্ভব হয় না । 


ব্যাংক ঋণের অপ্রতুলতাঃ 
        বাংলাদেশ ব্যাংক সহ অধিকাংশ বাণিজ্যিক ব্যাংক সমূহ খুব বেশি ঋণ দিতে পারে না ।  এজন্য বিভিন্ন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সমূহ মূলধনের অভাবে রপ্তানি করার জন্য পন্য উৎপাদন করতে পারে না।

কোটা আরোপঃ
    বাংলাদেশে প্রস্তুতকৃত বিভিন্ন পন্য অন্যান্য দেশে সহজে প্রবেশ করতে পারে না । আমদানী কারক দেশ গুলো কোটা বেধে দেয় । উক্ত কোটার চাইতে বেশি পন্য রপ্তানি করা সম্ভব হয় না ।


প্রতিযোগী দেশগুলোর সাথে টিকতে না পারাঃ
                 প্রতিযোগী দেশগুলোর সাথে টিকতে না পারাও এদেশের রপ্তানী শিল্পের বিকাশ সাধনে একটি বড় বাধা বলে বিবেচিত করা হয় । উন্নত দেশগুলো তাদের দক্ষতা দিয়ে যে সকল পন্য প্রস্তুত করে আমাদের দেশে উন্নত যন্ত্রপাতির অভাবে  ভালোমানের পন্য তৈরী করতে সামর্থ হয় না ।  এজন্য দেশ রপ্তানি শিল্পে পিছিয়ে পড়ছে ।

তৈরী পণ্যের মান নির্ণয়ে সমস্যাঃ
            বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিকৃত তৈরী পণ্যের মান নির্ণয়ে সমস্যা দেখা দেয় । আর্ন্তজাতিক মহলে আমাদের রপ্তানি পন্য নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠেছে । অনেক অসাধু ব্যবসায়ী প্রেরিত নমুনার সাথে প্রকৃত মালের গুণাগুনের পার্থক্য ধরা পড়েছে । এতে করে আমাদের পন্য বিদেশিরা নিতে আগ্রহ কমিয়ে ফেলেছে । 


             সপ্তম অধ্যায়

 

রপ্তানি বৃদ্ধিতে আমার সুপারিশঃ

 দেশের  রপ্তানিতে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে আমার মতে নি¤েœাক্ত সুপারিশ রয়েছে । নি¤েœ তার অবস্থান বর্ণনা করা হলো ঃ-

১. উপযুক্ত সরকারী নীতি ঃ-১৯৮২ সালের আইন সংস্কার করে নতুন রপ্তানি আইন তৈরী করতে হবে । এছাড়া তাদের নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন দেশের জন্য চুক্তি করা যেতে পারে ।

২. মনিটরিং ব্যবস্থা জোড়দার করা:- দেশে এবং বিদেশে রিক্রটিং এজেন্সিগুলো প্রতি বিশেষ নজরদাড়ি বাড়াতে হবে ।

৩.যোগ্য ব্যাক্তিদের সার্টিফিকেট প্রদানঃ- যেসব রপ্তানিকারক যে সকল ক্ষেত্রে দক্ষ তাদের সেই বিষয়ে সনদ প্রদান করতে হবে । 

৪. উপযুক্ত প্রশিক্ষন ও দক্ষতার জন্য কর্মসূচি প্রদান করতে হবে । কারণ উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ছাড়া রপ্তানি করা সম্ভব নয় । 

৫. রপ্তানির সময় দেশত্যাগ পূর্বক সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে । কারন বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম আইন থাকে ।

৬. প্রতিযোগীতামূলক শ্রম বাজারে টিকে থাকতে হলে দক্ষতা বৃদ্ধি ছাড়া আর অন্য কোন উপায় নাই । তাই শ্রমিকদের দক্ষতা অর্জনে সরকারি ও বেসরকারি ভাবে উদ্দোগ নিতে হবে ।

৭.পুনর্বাসনঃÑ দেশে ফেরত শ্রমিকদের জন্য দ্রুত পূর্ণবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে । 

৮. বিদেশ রপ্তানিকারক  শ্রমিকদের মাঝে নেটওয়াক তৈরী করতে হবে । 

৯. আমানত ও বিনিয়োগ রপ্তানি স্কিম  ঘোষণা করা যেতে পারে । 

১০. প্রতিটি দেশে বাংলাদেশী দূতাবাসের রপ্তানির জন্য বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে । 

১১. রপ্তানিকারক দের আইনগত বৈধতা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে ।

১২. রপ্তানিকারকদের উপার্জিত অর্থ সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে হবে ।

১৩. নতুন নতুন রপ্তানি বাজার বের করার জন্য সরকারের বিশেষ ভূমিকা নিতে হবে ।

  অষ্টম অধ্যায়


উপসংহারঃ
       বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে  পন্য রপ্তানির মাধ্যমে  অর্থনৈতিক উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে । তাই রপ্তানি আয়ে সকল পন্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে ।  রপ্তানি খাত সহ বিভিন্ন মাধ্যমে যে বৈদেশিক মুদ্র অর্জন করছে তা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি হিসেবে গ্রহণযোগ্য ।  সকল রপ্তানি খাতে বিশেষ বিশেষ সমস্যা থাকলেও তা উৎপাদন কার্যে তেমন প্রভাব পড়েনি । তবে এই সকল সমস্যা  দ্রুত সমাধান করা গেলে অতি অল্প দিনের ভিতরে বাংলাদেশ একটি রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে গন্য হতে পারে । এর ফলে আমাদের দেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে পারে ।

বর্তমানে রপ্তানি খাতের উন্নতিতে সরকারী বেসরকারী পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে আমাদের দেশ বিশে^র বিভিন্ন দেশের সাথে নতুন নতুন রপ্তানি চুক্তি করছে । এভাবে চলতে থাকলে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে রপ্তানি খাত ব্যাপক সমৃদ্ধ লাভ করবে ।
 
                       
                          গ্রস্থপঞ্জি

১. দিলিপ কুমার বল                               ঃ  বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অধ্যায় ।
২. মনোরঞ্জন দে                                   ঃ  বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অধ্যায় ।
৩. মনতোষ চক্রবর্তী                               ঃ আর্ন্তজাতিক অর্থনীতি   ।
৪. অধ্যক্ষ জহুরুল ইসলাম শিকদার               ঃ শিল্প অর্থনীতি     ।


 

আপনি ও পছন্দ করতে পারেন