রাজনৈতিক আদর্শ হিসাবে জাতীয়তাবাদ-পার্ট-২


                      পঞ্চম অধ্যায়

জাতীয়তাবাদ বনাম আন্তর্জাতিকতাবাদ:
বর্তমানে বিশে^র রাষ্ট্রনৈতিক চিনÍা জগতে জাতীয়তাবাদ ও আন্তর্জাতিকতাবাদ হলো দুটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়। এ শতাব্দী থেকে এদুটি বিষয় ও তাদের পারস্পরিক সম্পর্কে বিষয়ক আলোচনা নানা কারণে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে । 

বর্তমানে শতাব্দীতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যার ব্যাপক উন্নতি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়ে রাষ্ট্র সমূহের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা দু- দুটি বিশ^যুদ্ধ শানিÍ প্রতিষ্ঠা ও মানব সভ্যতার অস্তিত্ব রক্ষা প্রভৃতি বহুবিধ কারনে জাতীয়বাদ বনাম 

আন্তর্জাতিকবাদের সমস্যাটি বর্তমানে দুনিয়ার বহু আলোচিত বিষয় সমূহের মধ্যে অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বর্তমান পরিবর্তনশীল বিশে^ জাতিভিত্তিক রাষ্ট্রের অপর্যাপ্ততা বা স্ববিরোধীতা বিভিন্নভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে। যেমন:Ñ

প্রথমত, বিংশ শতাব্দী তৃতীয় দশকে দ্বিতীয় বিশ^ যুদ্ধের ভয়াবহ দিনগুলোতেই বিশে^র শান্তিকামী মানুষের মনে উগ্র জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

 রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর , দান্তে প্রমুখ মনীষিগণ জাতীয়তাবাদ ও জাতীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার হল। এ শ্রেণির চিন্তাবিদদের অভিমত হলো জাতীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিলোপ এবং একটি বিশ^ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্রমেই আন্তর্জাতিকতার আদর্শ মৃর্ত হয়ে উঠে।

 এদের মতে, জাতিভিত্তিক রাষ্ট্রগুলো একটি বিশ^রাষ্ট্রের মধ্যে সংযুক্ত হলে যথার্থ বিশ^ শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভাব হবে। এভাবে জাতীয়  রাষ্ট্র সমূহের অবসান ঘটলে যুদ্ধের আশঙ্কা রোধ করা যাবে এবং আন্তর্জাতিকতাবাদের পথ প্রশস্ত হবে। 

দ্বিতীয়ত, কিন্তু আন্তর্জাতিকতাবাদ সম্বন্ধে এ বক্তব্য সর্বাংশে সমর্থনযোগ্য নয় । সঠিক অর্থে  এ ধারনাকে আন্তর্জাতিকতাবাদ বলা হয় না। এ হলো বিশ^জনীনতা বা সর্বজনীনতা আবার বিশ^রাষ্ট্রের সৃষ্টি যুদ্ধের আশঙ্কাকে রোধ করতে পারবে ।
তাও জোর দিয়ে বলা হয়। জাতীয়  রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিলোপ সম্ভব ও নয় কাম্যও নয়। আবার জাতীয় রাষ্ট্রের বিনুপ্তি ঘটলেই ভারীকালেকে যুদ্ধের নিগ্রহ থেকে মুক্তি দেয়া যাবে। এমন কোন নিশ্চয়তা নেই । 

               ষষ্ঠ অধ্যায়   


জাতীয়তাবাদ ও আন্তর্জাতিকতার মধ্যে সম্পর্ক:
বর্তমান বিশে^ সামগ্্িরক পরিস্থিতি আলোচনার পরিপেক্ষিতে আন্তর্জাতিকতার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে অসুবিধা হয় না।বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ^তৃত্ববোধের চেতনা ও আন্তর্জাতিক সেবা ছাড়া মানব সভ্যতার অস্তিত্ব বিপন্ন ।তেমনি সাম্প্রতিক বিশে^র রাজনৈতিক চিন্তাজগতে জাতীয়তবাদ ও আন্তর্জাতিকতা হলো দুটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়। নিন্মে জাতীয়তাবাদ ও আন্তর্জাতিকতার মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা করা হলো:Ñ

১। জাতীয়তাবাদ আন্তর্জাতিকতার সহায়ক: আদর্শ জাতীয়তাবাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিকতার কোন বিরোধ নেই। বিভিন্ন জাতির সংকীর্ণ স্বজাত বোধ বা অহমিকা আন্তর্জাতিকতা প্রসারের পথে বাধা সৃষ্টি করে অর্থাৎ বিকৃত বা উগ্র জাতীয়তাবাদই আন্তর্জাতিকতায় পরিপন্থী প্রকৃতি জাতীয়তাবাদ নয়।

প্রকৃতি জাতীয়তাবাদ  বস্তুত একটি মহান আদর্শ। আদর্শ জাতীয়তাবাদ মানুষের মনে স্বজাতি ও স্বদেশের প্রতি ভালবাসার সৃষ্টি করে দেশের স্বার্থে দায়িত্ব সম্প্রাদনে উদ্ধুদ্ধ করে এবং আত্ম ত্যাগে প্রেরনা যোগায়। 

২। জাতীয়তাবাদ আন্তর্জাতিকতার পরিধিকে প্রসারিত করে: আদশর্ক জাতীয়তাবাদ যুদ্ধের বিরোধী এবং যুদ্ধ প্রতিরোধ করে । আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদ রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি সদ্ভাব সহযোগিতা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান প্রভৃতি আদর্শের উপর জোর দেয়। প্রকৃতি জাতীয়তাবাদ বিশ^শান্তি ও নিরাপত্তার পক্ষে।
 
৩। পরস্পর নির্ভরশীল : আদর্শ জাতীয়তাবাদ ও আন্তর্জাতিকতা পরস্পরের পরিপূরক। জিম্মার্ন এর মতে জাতীয়তাবাদের পথেই আন্তর্জাতিকতায় পৌঁছতে হয়। উদ্দেশ্যের দিক থেকে জাতীয়তাবাদের পথেই  আনÍর্জাাতিকতায় মধ্যে কোন বিরোধ নেই, বরং উভয়ের মধ্যে অত্যন্ত ঘনিষ্ট সম্পর্ক বিদ্যমান, জাতীয়তাবাদ ও আন্তজাতিকতাবাদ পরষ্পর নির্ভরশীল।
 
৪। জাতীয়তাবাদ ছাড়া আন্তর্জাতিকতা অসম্ভব: 
পৃথিবীর সকল জাতির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমন্বয়ের ভিত্তিকে প্রত্যেকে যুক্তিযুক্ত আশা আকঙ্খা বাস্তবায়ন এবং অভাব অভিযোগের নিরসনের পথে আন্তর্জাতিকতার প্রতিষ্ঠা ঘটবে। আন্তর্জাতিকতার স্বার্থে উগ্র ও বিকৃত জাতীয়তাবাদকে পরিহার করা দরকার। 

কিন্তু আদর্শ জাতীয় তাবাদকে বাদ দিয়ে আন্তর্জাতিক সমুন্নত পরিবেশ গড়ে তোলা কল্পনা বিলাস মাত্র। সান ইয়াৎসেন এর মতে, 'ডব সঁংঃ ঁহফবৎংঃধহফ ঃযধঃ পড়ংসড়ঢ়ড়ষরঃধহরংস মৎড়ংি ড়ঁঃ ড়ভ 
                       সপ্তম অধ্যায়

ৎধঃরড়হধষরংস রভ বি ফরংপধৎফ হধঃরড়হধষরংস ধহফ মড় ধহফ ঃধষশ পড়ংসড়ঢ়ড়ঃধহরফংস বি ঢ়ঁঃ ঃযব পধৎঃ নবভড়ৎব ঃযব যড়ৎংব' .

জাতীয়তবাদ আন্তর্জাতিকতাবাদের প্রতি হুমকি স্বরুপ:
জাতীয়তাবাদ একটি জাতির মধ্যে নিজ দেশের অভ্যন্তরে জাতীয় সংহতি ও ঐক্য অক্ষুত্র রাখার কথা নির্দেশ করে।

 আন্তর্জাতিকতাবাদ তেমনি বিশে^র স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহকে ঐক্য প্রতিষ্ঠার ইঙ্গিত করে। অতএব জাতীয়তাবাদ ও আন্তর্জাতিকতাবাদের সম্পর্কে খুবই ঘনিষ্ট। 
আন্তর্জাতিকতাবাদের বক্তব্য হচ্ছে, আন্তর্জাতিক আইনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকতাবাদের বক্তব্য হচ্ছে, আন্তর্জাতিক আইনের মাধ্যমে সকল প্রকার আস্তর্জাতিক বিরোধের মাীমাংসা করা এবং জাতিতে জাতিতে শান্তি ও সম্প্রীতি অক্ষুন্ন রাখা।

 জাতীয়তাবাদকে সংরক্ষণ করেও আন্নর্জাতিকতাবাদ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। বস্তুত মানুষের জীবনের নিরাপত্তা অর্থনৈতিক রাজনৈতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতি ও উন্নতির জন্য শান্তি নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার স্থান সর্বাগে ও সর্বোচ্চ ।


উপসংহার: 
সামগ্রিক আলোচনা থেকেই এটুকু পরিষ্কার ভাবে প্রতিপন্ন হয় যে আদর্শ জাতীয়তাবাদ মানব সভ্যতার সমৃদ্ধি ও উন্নতির সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কিন্তু সংকীর্ন বা উগ্র জাতীয়তাবাদ সাম্রাজ্যবাদ রুপান্তরিত হয়এবং মানব সভ্যতার সংকট সৃষ্টি করে । সতরাং আদর্শ জাতীয়তাবাদ তার কল্যানকর প্রভাবের পরিপ্রেক্ষিতে একটি মহান রাষ্ট্রনৈতিক আদর্শ হিসেবে গণ্য হয় । 
আর উগ্র বা বিকৃত জাতীয়তাবাদ তার সা¤্রাজ্যবাদী প্রভাব প্রতিক্রিয়ার পরিপেক্ষিত মানব সভ্যতার শক্র হিসেবে তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হয়। প্রকৃত জাতীয়তাবাদের মধ্যে এর গুনাবলী এবং বিকৃত জাতীয়তাবাদের আদর্শের মাধ্যমে মূর্ত হলেও বিশ^ সভ্যতার এবং মানবতার মধ্যে তা আশীর্বাদ স্বরূপ। 

 
                         
    গ্রন্থপঞ্জি

১.    ড. অনদিকুমার মহাপাত্র রাষ্ট্রবিজ্ঞান 
২.    ড. এমাজউদ্দিন আহমদ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কথা 
৩.    সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান
৪.    সৈয়দ মকসুদ আলী   রাষ্ট্রীয় সংগঠনের রূপরেখা
৫.    ড. মোঃ মকসুদুর রহমান রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মৌলনীতি
৬.    প্রফেসর ইয়াসমিন আহমেদ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থনীতি

আপনি ও পছন্দ করতে পারেন