যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থা বিরল কেননা এর পূর্বশর্ত বিরল
- 15-Apr-2022 05:30AM
- Zahidul Islam
- 1085
প্রথম অধ্যায়
ভূমিকা
আইন ও শাসন বিভাগ এবং কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতা বন্টনের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সরকারের একটি রূপ হলো যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার । এক কেন্দ্রীক সরকারের বিপরীত শাসন ব্যবস্থা হলো যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থা ।
এক কেন্দ্রীক সরকারের সকল ক্ষমতা কেন্দ্রীক সরকারের হাতে অর্পন করা হলেও যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থায় ক্ষমতা কেন্দ্র ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে সংবিধানের বিধানুসারে বন্টন করা হয়ে থাকে ।
কেন্দ্র বা প্রদেশ কোন সরকারই অপর সরকারের কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারে না । যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার গঠনের ক্ষেত্রে দুটি পদ্ধতি চালু আছে । যার একটি হল প্রশাসনিক সুবিধার জন্য অপরটি এক কেন্দ্রিক রাষ্ট্রকে কয়েকটি স্বতন্ত্র অঙ্গরাজ্যে বিভক্ত করার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র গঠন করা যায় ।
যাকে বলা হয় বিভক্তি করণ প্রক্রিয়া । অপর পদ্ধতি হলো কয়েকটি সার্বভৌম রাষ্ট্র নিজেদের মধ্যে চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র গঠন করতে পারে একে বলা হয় সংহতি সাধন প্রক্রিয়া ।
২য় অধ্যায়
তাত্ত্বিক কাঠামো
আইন ও শাসন বিভাগ এবং কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতা বন্টনের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সরকারের একটি রূপ হলো যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার । কেন্দ্রীয় ও অঙ্গরাজ্য সমূহের মধ্যে ক্ষমতা বন্টনের দিক থেকে সরকারকে দুটো ভাগে ভাগ করা যায় । যেমনঃ
১. এককেন্দ্রীয় সরকার
২. যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ।
নি¤েœ যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের উৎপত্তি ও শাব্দিক অর্থ বিবেচনা করা হলো ।
যুক্তরাষ্ট্রের ইংরেজি শব্দ ঋবফবৎধঃরড়হ । যার উৎপত্তি ল্যাটিন শব্দ ঋড়বফঁং থেকে । আর কেয়েডাস অর্থ সন্ধি বা মিলন । অর্থাৎ শব্দগত অর্থে কতগুলো রাষ্ট্রের মধ্যে সন্ধি বা মিলনের ফলে যে নতুন রাষ্ট্রের উদ্ভত ঘটে তাকে যুক্তরাষ্ট্র বলে । রাষ্ট্রবিজ্ঞানে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের অর্থ ও তাৎপর্য ভিন্ন ।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার এমন এক সরকারকে বুঝায় যেখানে সংবিধানের মাধ্যমে কেন্দ্র ও অঙ্গরাজ্য সমূহের মধ্যে ক্ষমতা বন্টন করে দেওয়া হয় । যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার সম্পর্কে বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন ।
নি¤েœ তাদের মতামত উল্লেখ করা হল ।
(১) বিখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ফাইনার তার “ঞযব ঃযবড়ৎু ধহফ ঢ়ৎধপঃরপব ড়ভ সড়ফবৎহ মড়াবৎহসবহঃ” গ্রন্থে বলেছেন ‘‘ যুক্তরাষ্ট্র এমন এক সরকার ব্যবস্থা যেখানে কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার কিছু অংশ আঞ্চলিক সংস্থায় ন্যস্ত হয় এবং অন্যান্য অংশ ঐসব আঞ্চলিক সংঘের সমব্যয়ে গঠিত কেন্দ্রীয় সংস্থায় ন্যস্ত থাকে । [ রাজনৈতিক তত্ত্ব ও সংগঠন ‘‘ এস এম নাসির উদ্দিন পৃষ্ঠা নং ২৯৭ ] ।
(২) এ.জি ডাইসির মতে “ যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার হলো জাতীয় ও অঙ্গরাজ্যের অধিকারের মধ্যে সমন্বয় সাধনের একটি রাজনৈতিক কৌশল বিশেষ” । [ রাজনৈতিক তত্ত্ব ও সংগঠন ‘‘ এস এম নাসির উদ্দিন পৃষ্ঠা নং ২৯৭ ] ।
(৩) কে সি হুইলার বলেন “ যুক্তরাষ্ট্রীয় শাষনতন্ত্রে সরকারী ক্ষমতা কেন্দ্রটি সরকার ও আঞ্চলিক সরকার গুলোর মধ্যে এমন ভাবে বন্টন করা হয় যাতে উভয় ধরনের সরকার নিজ নিজ আইনগত ভাবে স্বাধীন থাকতে পারে ”। [ রাজনৈতিক তত্ত্ব ও সংগঠন ‘‘ এস এম নুর নবী পৃষ্ঠা নং ২৮৫ ] ।
(৪) সি এফ স্টং এর মতে “অ ভবফবৎধষ ংঃধঃব রহ যিরপয ধ হঁসনবৎ ড়ভ পড়-ড়ৎফরহধঃবফ ধঃ ঁঃবং ঁহরঃবফ ভড়ৎ পবৎঃধরহ পড়সসড়হ ঢ়ঁৎঢ়ড়ং ” । [ রাজনৈতিক তত্ত্ব ও সংগঠন ‘‘ এস এম নাসির উদ্দিন পৃষ্ঠা নং ২৯৭ ] ।
(৫) মন্টেস্কু এর ভাষায় “ জবফবৎধষ মড়াবৎহসবহঃ রং ধ পড়হাৎঃরড়হ নু যিরপয ংবাবৎধষ ংরসরধষৎ ংঃধঃব ধমৎবব ঃড় নবপড়সব রহ সবসনধৎং ড়ভ ধ ষধৎমব ড়হব”। [ রাজনৈতিক তত্ত্ব ও সংগঠন ‘‘ এস এম নাসির উদ্দিন পৃষ্ঠা নং ২৯৭ ] ।
পরিশেষে বলা যায় যে যুক্তরাষ্ট্র হল এমন একটি শাসন ব্যবস্থা যাতে কতকগুলো প্রদেশ নিয়ে সাধারণ রাষ্ট্রে সংবিধানের ভিত্তিতে কেন্দ্র ও প্রদেশের ক্ষমতা বন্টিত হয় । এ ক্ষেত্রে সাদারন বা কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক সরকার গুলো স্বতন্ত্র ও স্বাধীন ।
৩য় অধ্যায়
টার্ম পেপার রচনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
গবেষনা কর্মটি পরিচালনা করা হয় এমন একটি বিষয় নিয়ে যা গবেষনাকে গবেষনা করতে অনুপ্রেরণা যোগায় । গবেষনা মনে প্রাণে গবেষনা করতে পারে এ রকম একটি বিষয়ই টার্ম পেপারের জন্য দরকার ।
নি¤েœ টার্ম পেপারের গবেষনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হল ঃ-
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থা বিরল কেননা এর পূর্বশর্ত বিরল এটা সম্পর্কে জানার জন্য টার্ম পেপার গবেষনাটি প্রস্তুত করা হলো ।
টার্ম পেপার রচনার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের গবেষনা কাজের অভিজ্ঞতা হয় ।
টার্ম পেপারর গবেষনাটি আরো একটি অন্যতম লক্ষ্য উদ্দেশ্য হলো অর্নাস ২য় বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ন কাজ ।
উপরোক্ত সকল লক্ষ্য উদ্দেশ্য বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।
৪র্থ অধ্যায়
যৌক্তিকতা
বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সরকার ব্যবস্থা তাদের সাফল্যের শর্তাবলি বিভিন্ন সরকার ব্যবস্থার দোষ গুন প্রবনতা ও সরকার ব্যবস্থার সমস্যা ইত্যাদি নিয়ে ব্যাপক মাত্রায় গবেষনা পরিচালিত হলেও এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থা বিরল,
কেননা এর পূর্বশর্ত বিরল এ বিষয় নিয়ে তেমন একটি গবেষনা পরিচারিত হয় নি । তাই যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থা বিরল কেননা এর পূর্বশর্ত বিরল এ বিষয় নিয়ে একটি রুচিশীল বিচার বিশ্লেষনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে সম্যক ধারনা প্রদান করা হলো ।
৫ম অধ্যায়
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য ঃ-
আধুনিক সরকার হিসেবে খ্যাত যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থার কিছু স্বকীয় বৈশিষ্ট্য রয়েছে । যে গুলো অপরাপর সরকার ব্যবস্থার চাইতে বেশ ভিন্ন । নি¤েœ যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য সমূহ তুলে ধরা হল ।
১. দ্বৈত সরকার ব্যবস্থা ঃ
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থায় দু- ধরনের সরকার বিদ্যমান । যথা ঃ কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রাদেশিক সরকার । এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার সমগ্র দেশের শাসন কার্য পরিচালনা করে আর প্রাদেশিক সরকার নিজ নিজ প্রদেশের শাসনকার্য পরিচালনা করে । উভয় সরকারই সংবিধান কর্তৃক প্রদত্ত সমতা লাভ করে এবং স্ব স্ব ক্ষেত্রে তারা স্বতন্ত্র স্বাধীন ও সমমর্যাদা সম্পন্ন।
২. লিখিত সংবিধান ঃ
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থায় কেন্দ্র ও আঞ্চলিক সরকারের মধ্যে সুনির্দিষ্ট ভাবে ক্ষমতা বন্টনের সংবিধান লিখিত হয় । সংবিধানের রাষ্ট্র পরিচালনায় মূলনীতি ক্ষমতার পরিধি, নাগরিকদের মৌলিক অধিকার প্রভৃত বিষয় লিখিত অবস্থায় থাকে ।
৩. দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান
দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান অনুসরন যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য । এ ধরনের সংবিধান সাধারন সংখ্যাগরিষ্ঠতার সংশোধন করা যায় না বিধায় জটিল পদ্ধতি অনুসরন করতে হয় ।
৪. ক্ষমতার বন্টনঃ
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল আঞ্চলিক ক্ষমতার বন্টন । কেন্দ্রীয় সরকার ও আঞ্চলিক সরকার গুলোর মধ্যে সংবিধানের আলোকে ক্ষমতা বন্টিত হয় । কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্বে পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা, মূদ্রা সংক্রান্তি বিষয়, অর্থাৎ রাষ্ট্রের সামগ্রিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় সমূহ রেখে শিক্ষা, স্বাস্থ্য,গৃহায়ন,খাদ্য, ও সেবার ন্যায় আঞ্চলিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ঠ বিষয় সমূহ প্রদেশিক সরকারের হাতে ন্যস্ত করা হয় ।
৫. প্রাদেশিক স্বায়ত্বশাসনঃ
ক্ষমতা বন্টনের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার উৎপত্তি হলেও প্রাদেশিক সরকারগুলো সার্বভৌম থাকে না । বরং এগুলো সর্বাধিক স্বায়ত্বশাষন ভোগ করে । প্রাদেশিক স্বায়ত্বশাসন যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ঠ্য ।
৬.সংবিধানের প্রাধান্য ঃ
যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় সংবিধানের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয় । এক কেন্দ্রীক সরকারে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাধান্য পরিলক্ষিত হলেও যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারে কেন্দ্রীয় বা আঞ্চলিক কোন সরকারের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত না হয়ে সংবিধানের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয় ।
৭. দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা ঃ
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থায় সাধারনত দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা বিদ্যমান । উচ্চকক্ষ ও নি¤œকক্ষ, উচ্চকক্ষ সাধারণত অঙ্গরাজ্যে সমূহের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এবং নি¤œ কক্ষ জনগনের নির্বাচিত প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত হয় ।
৮. দ্বৈত নাগরিকত্ব ঃ
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থায় অনেক ক্ষেত্রে দ্বি নাগরিকত্ব পরিলক্ষিত হয় । এক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিক ফেডারেল সরকারের নাগরিকত্ব পাশাপাশি তার নিজস্ব অঙ্গরাজ্যের নাগরিকত্ব লাভ করে ।
৯. দ্বৈত আইনঃ
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থায় দুই ধরনের আইন বিদ্যমান । একটি কেন্দ্রীয় অপরটি প্রাদেশিক আইন । কেন্দ্রীয় ক্ষমতা বলে আইন প্রনয়ন করা হয় । এছাড়াও আইনসভার মাধ্যমে প্রাদেশিক আইন প্রনয়ন করা হয় ।
১০. বিচার বিভাগের প্রধান্য :
বিচার বিভাগের প্রাধান্য যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থায় অন্যতম প্রধান মৌলিক বিষয় । এ ধরনের শাসন ব্যবস্থায় বিচার বিভাগ ও নিরপেক্ষতার পরিচয় দান করে বিচার বিভাগ সংবিধানের অভিভাবক হিসেবে কাজ করে ।
সংবিধান এর ব্যাখা প্রসঙ্গে কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে মত বিরোধ দেখা দিলে বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গন্য হবে ।
১১. সম-মর্যাদাঃ
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থায় অঙ্গরাজ্য বা আঞ্চলিক সরকার গুলোর মধ্যে সমমর্যাদা বিদ্যমান থাকে ।
অর্থাৎ প্রত্যেক রাষ্ট্র এবং এর নাগরিকগন কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট সমমর্যাদা ও অধিকার পেয়ে থাকে । এসব ব্যাপারে কোন প্রকার বৈরী মৌনভাব পোষন করা হয় না ।