বাংলাদেশের দারিদ্র বিমোচনে গ্রামীন ব্যাংক পার্ট-2

  ষষ্ঠ অধ্যায়

৬.নারীর ক্ষমতায়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনঃ 
   বাংলাদেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী হওয়া সত্ত্বেও তারা এদেশে অবহেলিত লাঞ্চিত ও অত্যাচারিত। এর প্রধান কারণ হেলো অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নারীদের অংশগ্রহণ না থাকা। 

এক্ষেত্রে গ্রামীণ ব্যাংক সংস্থা নারী উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে নারীদের ক্ষমতায়নের ব্যাপক ভূমিকা পালন করে থাকে। নারীদের জন্য শিক্ষা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাকরণ ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান করা নারী নেতৃত্বের বিকাশ সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি ইত্যাদির মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংক নারীদের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন সাধন করে থাকে। 


৭.দুর্যোগ প্রস্তুতি ও মোকাবেলা ঃ 
                      বাংলাদেশ বিশে^র অন্যতম দুর্যোগ প্রবণ দেশ। প্রতিবছর বন্যা সাইক্লোন টর্নেডো ভূমিকম্পসহ বিভিন্ন রকমের প্রাকৃকিত দুর্যোগ আমাদের জাতীয় জীননে হানা দেয়। প্রানহানি ঘটার অসংখ্য লোকের ধ্বংস করে বিপুল সম্পদ।

 তাই দুর্যোগ মোকাবেলায় বিভিন্ন সময় গ্রামীণ ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি নিয়ে আর্তমানবতার সেবায় সরকারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। 

আশ্রয়কেন্দ্র সির্মাণ সংকেত প্রদান দুর্যোগ  পূর্বমুহুর্তে লোকজন ও তাদের গৃহপালিত পশুসহ অন্যান্য সম্পদ নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংক দুর্যোগ মোকাবেলায় ভূমিকা পালন করে থাকে। 


৮.স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নঃ
                       
 বাংলাদেশে স্বাস্থ্যগত সমস্যা একটি মারাত্মক সমস্যা । এ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে গ্রামীণ ব্যাংক গুরুত¦পূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। গ্রামীণ ব্যাংক স্বাস্থ্য কর্মসূচিতে প্রতিরোধ প্রতিকার ও পূর্নবআসনমূলক সেবা  দানের ব্যবস্থা রয়েছে যা স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধানের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নের সহায়তা করে থাকে। 
তাই গ্রামীণ ব্যাংক দেশের বিভিন্ন সাধারণ গরীব দুঃখি মানুষের জন্য বিভিন্ন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দিয়ে থাকেন। গ্রামীণ ব্যাংক গরীব মানুষের চিকিৎসা দেওয়া পাশাপাশি তাদের বিনামূল্যে ঔষধ দিয়ে থাকে। এবং দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাদের স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন করেছে। 

গ্রামীণ ব্যাংক এর সাথে সরকারের উচিত যৌথভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে জনগণের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রতি বেশি মনোযোগ দেওয়া।
  যাতে করে গ্রামবাংলা মানুষ স্বাস্থ্য প্রতি বেশি যন্ত্র নিতে পারে। 
তাই আমাদের দেশের সরকারের উচিত আর্থ সামাজিক ও দারিদ্র্য বিমোচনের পাশাপাশি স¦াস্থ্য ব্যবস্থা প্রতি বেশি মনোযোগ দিয়ে দেশের মানুষের সেবা করা। 
                সপ্তম অধ্যায়
          

গ্রামীন ব্যাংকের ক্ষতিকর দিকঃ
      ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়, সে আলোচনার বড় অংশ জুড়ে থাকে ক্ষুদ্রঋন দারিদ্র্য বিমোচনে কতোটা সফল বা ব্যর্থ। কিন্তু এ ঋণ দেয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে তার চেয়ে অনেক কম আলোচনা হয়। কিন্তু ঋণ দেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যেও রয়েছে বড় ধরনের গলদ।

 ঋণ নিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার আগেই শোধ করতে হয় কিস্তির টাকা। অথচ ঋণের টাকা লগ্নি করার পর একটি নির্দিষ্ট সময় পর আসে লাভের টাকা। কিন্তু খুদে কর্জ বাজারে পুঁজি লগ্নি হয়ে খাতকের হাতে পৌঁছানোর আগেই খুঁদে কর্জ পুঁজি নিয়ে নেয় ভবিষ্যতে তৈরি হবে যে উদ্বৃত্ত মূল্য, তার কিয়দংশ।

 কর্জ দেয়ার সময় খাতকের কাছ থেকে কেটে রাখা হয় প্রথম কিস্তির  টাকা। এই প্রথম কিস্তির  মধ্যে দিকে আছেন গ্রাম্য মহাজন। ফলে তিনি হয়ে পড়েন ‘ঋণদাস’। এভাবে অনেকক্ষেত্রে একজন ঋণগ্রহীতা বৃত্তাকার গতিপথে ঘুরপাক খেতে খেতে পরিণত হন ‘ঋণদাস’ এ, কখনো তার অবস্থা পূর্বের চেয়েও খারাপ হয়। 
অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে দারিদ্র্য বিমোচন কিংবা নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব হয়নি বলে মনে করেন। তিনি দারিদ্র্য বিমোচন কিংবা নারীর ক্ষমতায়নে ক্ষুদ্র ঋণের সাফল্যের দাবিকে মনে করেন ‘ভ্রান্ত ও প্রতারণামূলক’।

 এর যুক্তি হিসেবে তিনি কয়েকটি কারণও চিহ্নিত করেছেন। সেগুলো সংক্ষেপে এরকম- 
১. এই ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে গ্রামীণঅর্থনীতি অনেক বেশি বাজারমুখী হয়েছে। 

২. এই ঋণ প্রক্রিয়া অসংখ্য মানুষকে নতুন করে ঋণগ্রস্ত  করেছে, অনেককে সুদের মহাজন বানিয়েছে। 

৩. মোট ঋণগ্রহীতাদের খুব সামান্য অংশ তাদের অবস্থার পরিবর্তন আনতে পেরেছে। ঋণ পরিশোধে অক্ষমতার কারণে ক্রমে সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্যের শিকার মানুষ ক্ষুদ্রঋণের আওতা থেকে বহিষ্কৃত হচ্ছেন। 

৪. বেশিরভাগক্ষেত্রে নারী ঋণগ্রহীতা হলেও খরচ করে পুরুষ। ঋণ ব্যবহারে অনেক নারীর সিদ্ধান্ত  নেওয়ার ক্ষমতা না থাকলেও ঋণ পরিশোধের চাপ তাদের ওপরই পড়ে। 

২০০৬ সালে অর্থনীতিবিদ কাজী খালীকুজ্জামান আহমদ দুই হাজার পাঁচশ এক জন (২৫০১ জন) ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহীতার ওপর একটি গবেষণা করেন। এদের মধ্যে ৯৯ শতাংশই হলো নারী।

 তার গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, এনজিওগুলোর মূল সুদের হার ১০ থেকে ১৫ শতাংশ , কখনো কখনো ১৮ শতাংশ। তবে কার্যকর সুদের হার এবং ঋণ গ্রহণের কার্যকর খরচের হার যথাক্রমে গ্রামীণের ক্ষেত্রে ২৭% ও ৩১%, প্রশিকার ক্ষেত্রে ৩৯% ও ৪১% এবং ব্র্যাক ও আশার ক্ষেত্রে ৪২% ও ৪৫%।
 
একই গবেষণার ফলাফলে আরো দেখা যায়, ৯৬ শতাংশ বলেছে এক সপ্তাহ পর ঋণ পরিশোধ করার ক্ষেত্রে তারা চাপ বোধ করে। ৯০ শতাংশ নারী ঋণের টাকা স্বামী বা পুত্রের হাতে তুলে দেয়। অধিকাংশের আয়ের ক্ষেত্রে কোনো উন্নতি ঘটে নাই।

 ছোট ব্যবসা ও কুটির শিল্পের জন্য যারা ঋণ নিয়েছে তারা অনেকদিন ঋণের চক্রে ঘুরপাক খায়। তিন চতুর্থাংশ ঋণের টাকা থেকে অংশ বাঁচিয়ে এক সপ্তাহর মধ্যে কিস্তি  দেয়।
 অধিকাংশ কিস্তি পরিশোধ করে মজুর হিসেবে খেটে বা আগের জমানো টাকা বা স্বামীর আয় থেকে। কেবলমাত্র চার ভাগের একভাগ ঋণের টাকা থেকে আয় করতে সক্ষম হয়।

 ৫২ শতাংশ জানিয়েছে, ঋণ পরিশোধ করতে তাদের খাবার পরিমাণ কমিয়ে দিতে হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীরা ১৯৯৬, ২০০৪ ও ২০০৭ সালে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের গ্রামের ওপর সমীক্ষা চালিয়েছে।


 এসব সমীক্ষায় দেখা গেছে, শতকরা মাত্র পাঁচ থেকে ৯ ভাগ ঋণগ্রহীতা এই ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে নিজেদের অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে পেরেছে। শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ ঋণগ্রহীতার অবস্থা একইরকম আছে কিন্তু তাদের অন্যান্য উৎস থেকে ঋণ গ্রহণ করতে হয়েছে।

 শতকরা ৪০ থেকে ৪২ ভাগের অবস্থার অবনতি ঘটেছে। যাদের অবস্থার উন্নতি হয়েছে তাদের অধিকাংশের অন্যান্য আয়ের উৎস ছিল। (মুহাম্মদ : ২০১১) 


                  অষ্টম অধ্যায়
দারিদ্র্য বিমোচনে আমার সুপারিশঃ-
           দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য নিচের বিষয় গুলি বিবেচনা করা উচিত ঃ-
১.    সকলের জন্য প্রাইমারী শিক্ষা সুনিশ্চিত করতে হবে । 
২.    কিছু শাখা তৈরী করতে হবে যাতে গরীব লোকজন তাদের অর্থ বিনিয়োগ করতে পারে ।
৩.    কিছু দারিদ্র্য লোকের আতেœাকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে ।
৪.    দারিদ্র্যদের জন্য কম সুদে ঋণ দিতে হবে । 
৫.     দারিদ্র্য জনগণের আতেœাকর্মসংস্থানের শুরুতে উৎসাহ প্রদান করতে হবে । যাতে তারা কর্ম বিমুখ না হয় ।
৬.    তাদের ঋণ পরিশোধ করার পদ্ধতি সংগতি পূর্ণ করতে হবে । 
৭.    পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদের ও প্রতিটি কাজে অংশগ্রহণ করতে হবে ।
৮.    সমাজের বিত্তবানদের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।
৯.     গ্রামীন অর্থনীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে ।
১০.     সমাজের সর্ব স্তরের লোকদের দারিদ্র্যতার কারণ ও কুফল সম্পর্কে সচেতন করতে হবে ।
১১. গ্রামীন ব্যাংকের সুদের হার কমিয়ে আনতে হবে ।
১২. গ্রামীন সমাজের উন্নয়নে গ্রামীন ব্যাংকের কাজ করে যেতে হবে ।
১৩. গ্রামীন সমাজের বিভিন্ন স্তরে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিত হবে ।
১৪. ঋণ নিয়ে কেউ যেন টাকা নষ্ট না করে কোন উন্নয়নশীল খাতে ব্যয় করতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে ।
১৫. গ্রামীন ব্যাংকের শেয়ারের পরিমান সর্ব সাধারনের জন্য উন্মূক্ত করা যেতে পারে ।
১৬. গ্রামীন উন্নয়ন মূলক বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া যেতে পারে ।
১৭. সামাজিক উন্নয়ন মূলক বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে ।
১৯. নারীদের উন্নয়নের জন্য  বিশেষ বিশেষ  ঋণ পদ্ধতির প্রয়োগ করা যেতে পারে ।
২০. সমবায় গঠনের মধ্য দিয়ে সামাজিক বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে উন্নয়ন তরান্বিত করা যেতে পারে । সর্বপরি গ্রামীন উন্নয়নের জন্য সকল প্রকার উন্নয়ন কর্মকান্ডে গ্রামীন ব্যাংক অংশগ্রহণ করতে পারে । 


উপসংহার 
          বাংলাদেশের গ্রামীন সমাজ থেকে শুরু করে এখনকার শহরের সমাজের বিভিন্ন স্তরে গ্রামীন ব্যাংকের সেবা পাওয়া যাচ্ছে । গ্রামীন ব্যাংকের সূচনা গ্রামীন দারিদ্র্য মানুষকে অর্থিক ভাবে সাহায্য সহযোগিতা করার উদ্দেশ্যে ঋণ প্রদান করা  । বর্তমানে গ্রামীন ব্যাংক শহরের মাঝেও তাদের ঋণদান কর্মসূচি চালু করেছে । 
এছাড়া আমাদের দেশের মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক,  ভাবে সাবলম্বী হতে সাহায্য করে যাচ্ছে । বিশেষ করে জামানত বিহীন ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প দেশ-বিদেশে প্রশংসীত হয়েছে । এই কারণে বাংলাদেশের একজন মাত্র ব্যক্তি ড. ইউনুস(গ্রামীন ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা) শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন । গ্রামীন ব্যাংকের জন্য বাংলাদেশের সুনাম পৃথিবীর সকল দেশে ছড়িয়ে পড়েছে । সুতরাং একথা বলতেই পারি ড. মুহাম্মাদ ইউনুস এর হাতে গড়া গ্রামীন ব্যাংক আমাদের দেশের দারিদ্র্য বিমোচনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে চলেছে । 

 
                  

                           গ্রন্থপঞ্জি

১.    ড. অনদিকুমার মহাপাত্র  রাষ্ট্রবিজ্ঞান 
২.    ড. এমাজউদ্দিন আহমদ  রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কথা 
৩.    সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান
৪.    সৈয়দ মকসুদ আলী   রাষ্ট্রীয় সংগঠনের রূপরেখা
৫.    ড. মোঃ মকসুদুর রহমান  রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মৌলনীতি
৬.    প্রফেসর ইয়াসমিন আহমেদ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থনীতি
 

আপনি ও পছন্দ করতে পারেন