খাদ্য সমস্যা

প্রথম অধ্যায়

ভূমিকাঃ
       
       সুজলা সুফলা শস্য - শ্যামলা আমাদের এই দেশ বাংলাদেশ ।  সবুজে ঘেরা আমাদের এই দেশ । এদেশের যে দিকেই চোখ যায় সেদিকেই দেখা যায় সবুজ আর সবুজ । সবুজ ঘেরা বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ । এদেশের প্রায় ৮০% মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল ।
কিন্তু কৃষিপ্রধান দেশ হওয়া সত্বেও আমাদের দেশে বর্তমানে এক প্রকট সমস্যা দেখা দিয়েছে । তা হল খাদ্য সমস্যা ।

 বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১৬ কোটি লোক বসবাস করে । এই বৃহৎ সংখ্যক লোকের মুখে খাদ্য তুলে দেওয়া বর্তমানে বাংলাদেশের মত একটি উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে বোঝা হয়ে দাড়িয়েছে ।

যার প্রেক্ষিতে আমাদেরকে বিদেশের কাছে হাত বাড়াতে হচ্ছে । সুতরাং আমাদের যে পরিমাণ খাদ্য-শস্য প্রয়োজন তা উৎপাদন করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করতে হবে । 

  ২য় অধ্যায়

তাত্ত্বিক কাঠামোঃ
    
      খাদ্য সমস্যা হলো খাবারের অভাব । যতটুকু খাদ্য দেশের মানুষের জন্য প্রয়োজন তার চাইতে কম দ্রব্য উৎপাদিত হলে যে সমস্যা দেখা দেয় তাকে খাদ্য সমস্যা বলা হয় । 

কোন দেশের জনগনের প্রয়োজনের তুলনায়  উপযুক্ত মান সম্পন্ন খাদ্যর যোগান কম হলে যে সমস্যার সৃষ্টি হয় তাকে এক কথায় খাদ্য সমস্যা বলে । আবার কোন দেশে পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য থাকা
 সত্বেও যদি সাধারণ মানুষের খাদ্য ক্রয়ের ক্ষমতা না থাকে তাহলেও খাদ্য সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে ।


কৃষি খাতে নি¤œ উৎপাদন এবং উচ্চহারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশে খাদ্য ঘাটতির যে স্থায়ী সমস্যা দেখা দিয়েছে তাই খাদ্য সমস্যা ।

বাংলাদেশে খাদ্য ঘাটতির পরিমান প্রায় ১৫ থেকে ২০ লক্ষ্য টন । খাদ্য সমস্যার ফলে দেশের অর্থনৈতিক সমস্যা দেখা দেয় । এতে উন্নয়ন কর্মকান্ড ব্যাহত হচ্ছে ।  এদেশে বর্তমান খাদ্য সংকট আমাদের অর্থনীতির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে । সুতরাং খাদ্য সংকট একটি জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে  ।

এক কথায় বলা যায়,   প্রয়োজনের চাইতে কম খাদ্য উৎপাদন সমস্যাই হলো খাদ্য ঘাটতি । আর এটি আমাদের দেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ।  
                  

৩য় অধ্যায়

খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতাঃ 


    সাধারনত খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা বলতে দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদিত খাদ্য শস্য দ্বারা দেশের মোট চাহিদা পূরণ করাকে বুঝায় । তবে আমাদের দেশে খাদ্যর চাহিদা ও খাদ্যর প্রয়োজনীয়তা এক জিনিষ নয় ।

কারন এদেশের দারিদ্র সীমার নিচে বসবাসকারী লোকের সংখ্যা প্রায় ৪৭ শতাংশ মানুষ বাজারে প্রচলিত দামে তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য শস্য ক্রয়ে অক্ষম ।

এরূপ অবস্থায় দেশে উৎপাদিত খাদ্য শস্য দ্বারা বাজারের চাহিদা পূরণ করা গেলেও  দেশের সকল মানুষের খাদ্যর প্রয়োজন মিটেছে একথা বলা যাবে না । 
            
অতএব কোন দেশ যদি স্বদেশে উৎপাদিত খাদ্য শস্য দ্বারা দেশের জনগনের খাদ্যর দৈহিক চাহিদা মিটাতে পারে তবেই সে দেশকে  খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা বলা হয় ।

 ৪র্থ অধ্যায়

খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতার লক্ষ্য উদ্দেশ্যঃ
     বাংলাদেশে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ নয় । প্রতিবছর আমাদের প্রায় গড়ে ২০লক্ষ মেট্টিকটন খাদ্য শস্য বিদেশ থেকে আমদানী করতে হয় । 
কৃষি প্রধান বাংলাদেশ খাদ্য ঘাটতি রেখে দ্রুত শিল্পোন্নয়ন খুবই দূরূহ । এ সম্পর্কে নি¤েœ আলোকপাত করা হলোঃ


১. কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিঃ
         শিল্পোন্নত দেশে শিল্পপণ্য রপ্তানি করে খাদ্য শস্য আমদানি করা যায় ।
ইউরোপের অধিকাংশ উন্নত দেশ বর্তমানে তাই করছে । কিন্তু বাংলাদেশ শিল্পে অনগ্রসর ।
 সুতরাং আমাদের পক্ষ্যে শিল্প পণ্য

রপ্তানি করে খাদ্য শস্য আমদানি করার চিন্তা নিরর্থক । তাই খাদ্য উৎপাদনে  স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেই আমাদেরকে খাদ্য সমস্যার সমাধান করতে হবে ।

২. দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধঃ
         এ অঞ্চলের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, সুদূর অতীত কাল থেকেই আমাদের এ অঞ্চলটি মহামারী ও দুর্ভিক্ষে বার বার আক্রান্ত হয়েছে । 

বাংলাদেশের যে ক্রমাগত খাদ্য ঘাটতি বিরাজমান রয়েছে তাতে হঠাৎ কোন প্রাকৃতিক দৃর্যোগ এ দেশকে পূণরায় দুভির্ক্ষের দ্বার প্রান্তে নিয়ে যেতে পারে ।
তাই খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন আমাদের জন্য একান্ত অপরিহার্য ।
  


৩. সামাজিক অস্থিরত রোধাঃ
         খাদ্যাভাব সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করে । ক্ষুধা মানুষকে অপরাধ প্রবণ করে তোলে । সুতরাং সামাজিক শান্তি বজায় রাকার স্বার্থে আমাদেরকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে  । 
 


৫. পরনির্ভরশীলতা হ্রাসঃ 
        যুদ্ধ প্রভৃতি আপদ কালে খাদ্য দ্রব্যর আন্তর্জাতিক চলাচল বিঘিœত হয় । সুতরাং খাদ্যের জন্য বিদেশের উপর নির্ভরশীলতা অত্যান্ত বিপদজনক । খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন জাতিকে এধরনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে পারে ।
 

৬.মৌল মানবিক চাহিদা পূরণঃ
                মানুষের খাদ্য গ্রহণ অপরিহার্য । খাদ্য ছাড়া মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না । সুতরাং খাদ্যে মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ হয় । তাই আমাদের খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে ।


৭. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাঃ
           খাদ্য সমস্যা জনগনের কাছে সরকারকে অপ্রিয় করে তুলে । খাদ্য সংকটের কারণে উন্নয়ন শীল এই দেশে বহুবার সরকারের পতন ঘটিয়েছে ।

সুতরাং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার স্বার্থেও বাংলাদেশের খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন একান্ত অপরিহার্য ।


৮. বৈদেশিক মূদ্রার সাশ্রয়ঃ 
         বর্তমানে খাদ্য আমদানিতে প্রচুর অর্থ ব্যয় হয় । দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে বৈদেশিক মূদ্রার সাশ্রয় হয় । এতে অন্যখাতে অর্থ ব্যয় করে দেশ উন্নয়ন তরান্বিত করতে পারা যায় ।


৯. আন্তর্জাতিক খাদ্য  বাজারে  স্থিতিশীলতার অভাবঃ 
                 বর্তমানে আন্তর্জাতিক খাদ্য বাজারে  স্থিতিশীলতার বিরাজ করে না । খাদ্য শস্যের দাম উত্থান পতন  আন্তর্জাতিক খাদ্য  বাজারে  স্থিতিশীলতার নষ্ট করে । 

এরূপ আবস্থায় আমদানির উপর নির্ভর না করে দেশকে স্বয়ং সম্পূর্ণ করে গড়ে তোরা গুরুত্ব অপরিসীম ।  

পরিশেষে বলা যায় যে, 
                     বাংলাদেশের বর্তমান খাদ্য সংকট আমাদের অর্থনীতির জন্য রীতিমত হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে । 

কারন খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা না হয়ে আমাদের পক্ষে অর্থনৈতিক উন্নয়নের যাত্রাপথে অগ্রসর হওয়া  কঠিন হয়ে পড়েছে ।

আপনি ও পছন্দ করতে পারেন