বাংলাদেশের অর্থনীতিতে জনশক্তির রপ্তানির প্রভাব-পার্ট-২

  চতুর্থ অধ্যায়

কৃষি উন্নয়ন
মালয়েশিয়ায় সরকারিভাবে জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে এ অসাধুচক্র বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এমনকি তারা বেসরকারিভাবে জনশক্তি রপ্তানি বন্ধের হুমকি দিয়ে ধর্মঘটও পালন করে। কিন্তু সরকারের অনড় অবস্থানের কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সরকার স্বল্প খরচে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি করতে সক্ষম হয়েছে। সদিচ্ছা থাকলে যে অনেক কিছুই সম্ভব সেটি এর মাধ্যমে আবারো প্রমাণিত হলো।

বিদেশে শ্রমিকরা গিয়ে অনেক সময় অনেক সমস্যার মধ্যে পড়েন। এ জন্য সংশ্লিষ্ট দূতাবাসগুলো সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। অভিযোগ রয়েছে অনেক সময় শ্রমিকরা বিপদে পড়েও দূতাবাস কর্মকর্তাদের কোনোরকম সহায়তা পান না। এতে যে ওই শ্রমিকটি ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শুধু তাই নয়থ দেশও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে বঞ্চিত হয়। এ ব্যাপারটি অবশ্যই মাথায় রেখে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীল আচরণ 

করতে হবে। এছাড়া বিদেশে গিয়ে অনেকেই নানা রকম ইচ্ছা অনিচ্ছায় নানারকম অপরাধকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। এতে ওইসব দেশে শ্রমবাজার নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ জন্য এ ব্যাপারেও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মনে রাখতে হবে এর সঙ্গে দেশের সুনামের বিষয়টিও জড়িত। 
নতুন নতুন শ্রমবাজার যেমন খুঁজে বের করতে হবে, তেমনি বাজার ধরে রাখার জন্যও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। আর জোর দিতে হবে দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর দিকে। এ জন্য প্রয়োজনে দক্ষ শ্রমিক সৃষ্টির জন্য সরকারি-বেসরকারিভাবে আরো জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের এ খাতটি যাতে কিছুতেই কোনোরকম হুমকির মুখে না পড়ে সে ব্যাপারেও সতর্ক দৃষ্টি রাখা জরুরি।

বিদেশে চাকরিপ্রার্থী কেউ যাতে দালাল বা অসাধুচক্র কিংবা সরকারি কোনো কর্মী দ্বারা কোনোভাবেই হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়ে কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা করতে হবে। যেখানে চাকরিপ্রার্থী, সেখানেই অবৈধ অর্থের লেনদেনথ প্রচলিত এই কুসংস্কৃতির বেড়াজাল থেকে আমাদের অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে। জনশক্তি রপ্তানির যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার পাশাপাশি তাই দুর্নীতি মাথাচাড়া দেয়ার সব ফাঁকফোকরও 

বন্ধ করতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে কোনো শৈথিল্য, অব্যবস্থা, অসাধুতা এবং দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে তার বা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনিব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে - 
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে দেশের সূচনালগ্ন হতেই ছিল প্রধানত কৃষিভিত্তিক। বিগত কয়েকটি দশকে এ অর্থনীতি ব্যবস্থায় এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। 

 পঞ্চম অধ্যায়

জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যা 
বাংলাদেশের ইতিহাসে এ যাবত এটাই সর্বোচ্চ রেমিটেন্স আয়। বাংলাদেশের সার্বিক আর্থ-সামাজিক অবস্থায় জনশক্তি রপ্তানি শুধু নিশ্চিত বিনিয়োগ নয়, নিরাপদ বিনিয়োগ হিসাবে বিবেচনা করা যায়। বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় যে হারে বাড়ছে তা অব্যাহত থাকলে আগামী ২০২৭ সালের মধ্যে এদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে নিশ্চিত
বাংলাদেশের অর্থনীতি এ দেশের সূচনালগ্ন হতেই ছিল প্রধানত কৃষিভিত্তিক। বিগত কয়েকটি দশকে এ অর্থনীতি ব্যবস্থায় এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন।

শ্রমবাজারে প্রতিযোগীতা ও অদক্ষ শ্রমিক
               কৃষিভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে খোল নলচে পাল্টে ফেলেছে এদেশের শ্রমিক ভাই-বোনদের উৎপাদিত পোশাকের রফতানি আয় আর বিদেশ থেকে পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। বর্তমানে বাংলাদেশের শিক্ষিত জনসংখ্যার হার শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ। এছাড়াও বিগত কয়েকটি দশকে এদেশে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগব্যবস্থায় ক্রমবর্ধমান উন্নতির ছোঁয়া এবং সহজলভ্যতা এদেশের সাধারণ জনগণকে করে তুলেছে অধিকতর সচেতন ও আত্মপ্রত্যয়ী। আর এ সচেতনতা ও আত্মপ্রত্যয়কে কাজে লাগিয়ে এদেশের সাধারণ মানুষ তাদের অর্থনৈতিক অবস্থানকে ক্রমশ শক্তিশালী করার ঐকান্তিক প্রয়াসে লিপ্ত । যার ফলাফল আমরা দেখতে পাচ্ছি আমাদের জিডিপি'র প্রবৃদ্ধিতে। সবাই হয়ত সফল নন তবুও হতাশ নন কেউই। এরই ধারাবাহিকতা বিবেচনায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে নতুন ধারার সূচনা হয়েছে তাকে অর্থনীতির

 ভাষায় অদৃশ্য হাত মতবাদ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সম্প্রতি জাতিসংঘ উন্নয়ন ও বাণিজ্য বিষয়ক সংস্থা (্্ইউএনসিটিএডি) কর্তৃক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে, বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় যে হারে বাড়ছে তা অব্যাহত থাকলে আগামী ২০২৭ সালের মধ্যে এদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়। 

আর এ জন্য প্রতিবেদনটিতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি কৃষি, রফতানি আয় এবং রেমিটেন্স প্রবাহের বর্তমান ধারা ধরে রাখার ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

অবৈধ উপায়ে লোক প্রেরণ
বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ হলেও বার্ষিক জিডিপিতে এ খাতটির অবদান শতকরা মাত্র ৩০%। অপর্যাপ্ত কৃষি ভর্তুকি এবং ব্যাংক ঋণ সুবিধা, বিদ্যুৎ ও সার সঙ্কট এ খাতের প্রধান অন্তরায়। কিন্তু সবচেয়ে বড় ঝুঁকির কথা হলো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অর্থনৈতিক সঙ্কটের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি তথা গ্রীন হাউস ইফেক্ট এবং এর ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের আধিক্য। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের অন্যতম প্রধান শিকার বাংলাদেশ। এর মধ্যে আবার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের উপকূলীয় অঞ্চল। এছাড়া প্রত্যেকটি বিভাগে

 চলছে শহর সম্প্রসারণের কাজ। নির্মিত হচ্ছে নতুন নতুন ঘরবাড়ি। সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্যও করা হচ্ছে হাজার হাজার একর কৃষি জমি হুকুম দখল। যা কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি বিনির্মাণে প্রধান অন্তরায়। ফলশ্রুতিতে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য কৃষির ওপর আস্থা রাখা ক্রমশই কঠিন হয়ে পড়ছে।

শ্রম বাজার সর্ম্পকে ধারণার অভাব
আমাদের দেশে জনসংখ্যা এখনও বড় জাতীয় সমস্যা। বিশ্বজনসংখ্যা রিপোর্ট/২০১০ অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৪৪ লাখ। বিশ্ব জনসংখ্যায় বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। কিন্তু কাজে লাগানোর তেমন কোনো ক্ষেত্র সৃষ্টি না হওয়ায় বেকারত্বের অভিশাপ থেকে তারা মুক্ত হতে পারছে না খোদ সরকারও পারছে না বেকারত্বের অভিশাপ থেকে এদেশকে মুক্ত করতে। এই সমস্যাকে সমাধান করতে এবং জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রে দক্ষ, আধা দক্ষ, অদক্ষ শ্রমিক, ওয়েজ আর্নাররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আপনি ও পছন্দ করতে পারেন