অর্থনৈতিক উন্নয়নে রপ্তানি খাতের ভূমিকা

                        প্রথম অধ্যায়


ভূমিকা
  স্বাধীনতার সময় বাংলাদেশ উত্তরাধিকার সূত্রে যে উৎপাদন ও ভোগ কাঠামো লাভ করে তা পর নির্ভরশীল ছিল । স্বাধীনতার পর পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হবার ফলে বিদেশের সাথে নতুন ভাবে বাণিজ্য সম্পর্ক বিন্যাস্ত করার প্রয়োজনীয়তা লক্ষ্য করা যায় ।
বাংলাদেশ আমদানি নির্ভর দেশ ।  এদেশের আয়তন কম হওয়া সত্বেও এখানকার জনবসতি ১৮ কোটির কাছাকাছি । তবে এদেশ ১৯৮৩-৮৪ সাল থেকে অল্প সংখ্যক পন্য রপ্তানি করে থাকে ।  আমাদের দেশের রপ্তানি খাতের ৪১% বাজার পুঁজিবাদী দেশগুলোর সাথে । একই সাথে এই সকল দেশ গুলো থেকে ৫৮ শতাং পন্য আমদানি করা হয় । অপর দিকে সমাজতান্ত্রিক দেশ গুলোর সাথে আমদানি রপ্তানি সম্পর্ক থাকলেও এ সকল দেশে যে পরিমাণ পন্য আমদানি  করা হয় তার চাইতে খুবই অল্প পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করা হয় । 

বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটেছে । এই অর্থনৈতিক উন্নয়নে রপ্তানি খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা  রাখছে ।  বিশেষ করে সরকারী বেসরকারী ভাবে উৎপাদিত বিভিন্ন পন্য বিদেশে রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে ।  এক্ষেত্রে শিল্পজাত পন্য যেমন তৈরী পোশাক,ওষুধ, চামড়া ইত্যাদি সহ বিভিন্ন কৃষি পন্য বিদেশে রপ্তানি করছে । এছাড়া প্রচলিত  ও অপ্রচলিত পন্য যেমন হিমায়িত চিংড়ি, ব্যাঙের পা, ফুল, মানব শ্রম বিশেষভাবে উল্ল্যেখযোগ্য । রপ্তানি শিল্পের অগ্রগতির মাধ্যমে বাংলাদেশ নি¤œ আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে ।
এছাড়া বিদেশে বাংলাদেশের পন্যের ব্যাপক চাহিদা থাকার ফলে, এদেশের রপ্তানি আয় আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে ।


রপ্তানি নির্ভর উন্নয়নঃ
     রপ্তানি নির্ভর উন্নয়ন বলতে কোন দেশকে কেবলমাত্র রপ্তানি দ্বারা অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার দ্বারা অর্থনৈতিক উন্নয়নের চেষ্টা করাকে বুঝায় । অর্থাৎ কোন দেশ ক্রমাগত রপ্তানি বৃদ্ধি করলে  ঐ দেশের শিল্পের  বিভিন্ন সেক্টরে চাপ পড়বে যার ফলে কৃষি ও শিল্পের উন্নয়ন সাধন হবে ।

রপ্তানি বাণিজ্যের কয়েকটি হাতিয়ারের সংজ্ঞাঃ

রপ্তানি করঃ
 একটি দেশ তার বৈদেশিক বাণিজ্যকে নানাভাবে নিয়ন্ত্রন করতে পারে । শুল্ক প্রাচীর ছাড়াও আরও কতক গুলো প্রন্থা আছে, যার মাধ্রমে একটি দেশের বাণিজ্য নীতি পরিচালিত হয় ।  শিল্প উন্নত দেশে রপ্তানি কর খুবই কম ধরা হয় ।  উন্নয়নশীল দেশে বেশি রপ্তানি কর দেখা যায় ।  যেমন আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে কাঁচামাল রপ্তানি ও খাদ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে কর আরোপিত হয় । উন্নয়নশীল দেশসমূহ বিভিন্ন কারণে তাদের রপ্তানির উপর কর আরোপ করে । যেমনঃ-

১.    রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য রপ্তানি কর আরোপিত করা হয় ।
২.     বাণিজ্য হারের উন্নয়নের জন্য রপ্তানি কর আরোপিত করা হয় ।
৩.     দেশের অভ্যন্তরে কাঁচামালের প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য রপ্তানি কর আরোপিত করা ।

রপ্তানি ভর্তুকি ঃ
        রপ্তানি ভর্তুকি রপ্তানি করের ঋণাত্বক অবস্থা বলে বিবেচিত করা হয় । তাই রপ্তানি ভর্তুকি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা প্রয়োজন  নেই । রপ্তানি ভর্তুকির প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো বিদেশি ব্যয়কে কিভাবে দেশীয় দ্রব্যের ক্ষেত্রে স্থানান্তরিত করে রপ্তানি বাড়ানো যায় ।
রপ্তানি ভর্তুকি আবার দুই ধরণের হতে পারে ।
১.    ঙাবৎঃ রপ্তানি ভর্তুকি
২.     ঈড়াৎঃ রপ্তানি ভর্তুকি  


রপ্তানি কোটাঃ
    একটি দেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে রপ্তানির পরিমাণ নিয়ন্ত্রের মাধ্যমে একচেটিয়া ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে । সরকার ঘোষণা দিতে পারে যে, একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি দেশ নির্দিষ্ট পন্য রপ্তানি করতে পারবে । এই উদ্দেশ্য সরকার রপ্তানি লাইসেন্স ইস্যু করতে পারে । রপ্তানি করের ন্যায় রপ্তানি কোটাও নির্ধারিত পন্যের দামকে প্রভাবিত করতে পারে ।  

এছাড়া রপ্তানি কোটার মাধ্যমে কোন দেশ তার বন্ধুদেশকে শুল্ক মুক্ত পন্য রপ্তানি করার সুযোগ দিয়ে থাকে ।  যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশকে জি.এস.পি  সুবিধার মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশকে তাদের দেশে পন্য রপ্তানিতে সুযোগ দিয়ে থাকে । তবে এতে বিভিন্ন নিয়ম কানুন মেনে পন্য রপ্তানি করতে হয় । 
 
                         দ্বিতীয় অধ্যায়


বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের উৎসসমূহঃ 
                    দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ তার ভৌগলিক অবস্থা, সম্ভাবনাময় জনশক্তি, বন্দর সুবিধা ও সস্তা শ্রমের জন্য বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ আকর্ষণীয় । বিগত একদশক হতে গড় প্রবৃদ্ধির হার ৫.৬% এবং ১৯৯৫ সাল থেকে গড় মুদ্রাস্ফীতির হার ৫.৫% যা বিনিয়োগের উপযোগী পরিবেশ ।  ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ উৎপাদিত পন্য রপ্তানি করে ৩১২০ কোটি মার্কিন ডলার আয় করেছে ।

যার ফলে আমাদের দেশ নি¤œ আয়ের দেশ হতে নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে ।  এভাবে রপ্তানি খাতে বিনিয়োগ বাড়তে থাকলে অতি অল্প সময়ের মধ্যে এদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে ।

রপ্তানি পণ্যের উৎসঃ

১.    টেক্সটাইল কারখানাঃ
                  বাংলাদেশে  ১৯৮০ দশক হতে গার্মেন্টস শিল্পের বিকাশ লাভ করে ।  বিশে^র ৫ ভাগের ১ ভাগ পোশাকের চাহিদা আমাদের দেশ পূরণ করে থাকে । এর সাথে অন্যান্য শিল্প সমূহ ধীরে ধীরে উন্নত হচ্ছে । টেক্সটাইলসহ গার্মেন্টশিল্পের পশ্চাদপদ শিল্প গুলোতে ব্যাপক বিদেশী বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে ।

২.    প্রাকৃতিক গ্যাসঃ 
        বিদেশি বিনিয়োগের অন্যতম সম্ভাবনার ক্ষেত্র হলো প্রাকৃতিক গ্যাস ।  দেশে মোট ২২টি প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্র আছে । দেশে মোট বিদ্যুতের মোট চাহিদার ৬০% আসে প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্র থেকে । প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্র গুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন, সিএনজি, সার কারখানার জন্য বিদেশী সম্ভাবনা আছে ।  এছাড়া প্রাকৃতিক গ্যাস বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব ।


৩.    ঔষুধ শিল্পঃ 
         ঔষুধ শিল্পে দেশি বিদেশী বিনিয়োগকারীদের যথেষ্ঠ সম্ভাবনা আছে । আমাদের দেশ যথেষ্ঠ ঔষুধ এর চাহিদা রয়েছে । ঔষুধ শিল্পের কাঁচামাল আমাদের দেশে সহজ লভ্য । এছাড়া গত কয়েক বছরে ঔষুধ শিল্প বেশ উন্নত হয়েছে ।  এতে বেশ জনশক্তিও তৈরী হয়েছে । সরকার যথাযথ ঔষুধ শিল্প নীতি প্রনয়ণ করে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে পারে । এছাড়া আমাদের দেশর উৎপাদিত ঔষুধ বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে । এতে করে দেশ উন্নত হচ্ছে ।

৪.    চামড়া শিল্পঃ
          চামড়া শিল্প বাংলাদেশের পুরোনো শিল্পের মধ্যে অন্যতম । কিন্তু এই চামড়া শিল্প বিনিয়োগে আগ্রহী দেশ পাওয়া যায় নি । তবে দেশীয় বাণিজ্য নীতি সহজ হওয়ায় সরকারী ও বেসরকারী ভাবে এই শিল্প বিকাশিত হচ্ছে ।  এছাড়া প্রক্রিয়াজাত চামড়া শিল্প পন্য বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে ।

৫.    কৃষিভিত্তিক শিল্পখাতঃ
         আমাদের দেশ কৃষি ভিত্তিক দেশ । এই দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তিই হলো কৃষি । কৃষি ছাড়া আমাদের উন্নয়ন করা সম্ভব নয় । বাংলাদেশে সরকারী ও বেসরকারী ভাবে কৃষিতে বিনিয়োগ করা সম্ভব । কৃষিকে আধুনিকায়ন করে তা বিদেশে রপ্তানি করা যায় । বাংলাদেশ অতি অল্পসংখ্যক কৃষি পন্য বিদেশে রপ্তানি করে । 

বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের তথ্য একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ নি¤েœ উল্ল্যেখ করা যেতে পারে ।
শল্পি ও আর্ন্তজাতকি বাণজ্যি
কৃষ-িপণ্য    ধান, পাট, চা, গম, ইক্ষু, আলু, তামাক, ডাল, তলৈবীজ, মশলা, ফল-ফলাদ;ি মাংস, দুধ, পোলট্রি
রপ্তানি    ৬.৬ বলিযি়ন ডলার (২০০১)
রপ্তান-িপণ্য    তরৈি পোষাক, পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া, হমিায়তি মৎস ও সামুদ্রকি খাদ্য
রপ্তান-িসহযোগী    যুক্তরাষ্ট্র ৩১.৮%, র্জামানি ১০.৯%, যুক্তরাজ্য ৭.৯%, ফ্রান্স ৫.২%, নদোরল্যান্ডস ৫.২%, ইতালি ৪.৪২% (২০০০)
আমদানি    ৮.৭ বলিযি়ন ডলার (২০০১)
আমদান-িপণ্য    মশেনিারি ও যন্ত্রাংশ, রাসায়নকি দ্রব্য, লোহা ও ইস্পাত, পোষাক-সামগ্রী, সূতা, খাদ্য, অপরশিোধতি তলে ও জ্বালান,ি সমিন্টে ক্লংিকার
আমদান-িসহযোগী    ভারত ১০.৫%, ইউরোপীয়ান ইউনযি়ন ৯.৫%, জাপান ৯.৫%, সঙ্গিাপুর ৮.৫%, চীন ৭.৪% (২০০০)
র্অথনতৈকি সাহায্য-গ্রহীতা    ১.৫৭৫ বলিযি়ন ডলার (২০০০ অনুমতি)
মুদ্রা বনিমিয় হার    টাকা (৳) প্রতি র্মাকনি ডলারে (টঝ$১) - ৬৯.০০০ (অক্টোবর ২০০৬), ৪৯.০৮৫ (১৯৯৯), ৪৬.৯০৬ (১৯৯৮), ৪৩.৮৯২ (১৯৯৭)
 

আপনি ও পছন্দ করতে পারেন